দেওয়াল চিত্র – দীপ্তকীর্তি চট্টোপাধ্যায়

এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন -

দীপ্তকীর্তি চট্টোপাধ্যায়

দীপ্তকীর্তি গুপ্তিপাড়ার আগামী প্রজন্ম। টেংরিপাড়া অধিবাসী তমোনাশ চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র। শিল্পানুরাগী পিতামাতা তাদের ঘরের সমস্ত দেওয়াল পুত্রের আঁকার জায়গা করে দিয়েছেন। সুযোগ্য পুত্রও তার যথার্থ সদব্যবহার করেছেন। ঘরের সমস্ত দেওয়াল জুড়ে দীপ্তকীর্তি তার কল্পনা বিস্তার করেছেন।

আমাদের এই নিবেদনে রইলো দীপ্তকীর্তির আঁকা ছবি নিয়ে চল্লিশটি ফোটোগ্রাফ। অবশ্যই দীপ্তকীর্তির কাজের খানিক অংশই এতে ধরা গেল। গুপ্তিপাড়া মিডিয়ার পক্ষ থেকে দীপ্তকীর্তির জন্য ভালোবাসা, শুভেচ্ছা ও তার শিল্পমানসের অসীম বিস্তার প্রার্থনা করি।

চিন্তাসূত্র

শিশুমনের বিকাশে কল্পনা বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে গণ্য হয়। আমরা প্রায়শঃই শিশুদের ছবি আঁকা শেখাতে গিয়ে তাদের নিজস্ব কল্পনার পথরোধ করে ফেলি। তেমনই শিশুদের আঁকা ছবি দেখার জন্যও সঠিক মানসিকতা ও শিল্পবোধ প্রয়োজন হয়। এ ছবিতে যেমন অবাধ আনন্দ আছে, তেমনই আমরা দেখতে পাবো তার বিভিন্ন মানসিক ভাবের সরাসরি প্রতিফলন। একটু মন দিয়ে দেখলেই দর্শক এবং পাঠক দেখতে পাবেন ছবির প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে তাদের কাজ এবং চরিত্র অনুযায়ী ‘ডিটেলিং’ এবং প্রতিটি ছবির মধ্যে একটি গল্পের আভাস বেশ স্পষ্ট। ছবির বিষয় হিসেবে যুদ্ধই প্রধান। বাংলার বালকমানসের অন্যন্য উদাহরণ অপুর মতোই যুদ্ধের সাধ যেন মেটে না আর। যুদ্ধের সাথে সাথে ছবির বিষয় হয়ে ওঠে গান বাজনা, আরো কতরকম সামাজিক বিষয়।

দীপ্তকীর্তির ছবির আরো একটি দিক পোর্ট্রেট। জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্রগুলির পোর্ট্রেট আঁকার সময় তিনি বাস্তবতার দিকে যথেষ্ট মনোযোগী। এই ধরণের ছবিগুলিতে রেখা এবং রঙের সাবধানী ব্যবহার লক্ষ্য করবেন। অন্যান্য মুখাবয়বগুলিতেও সংযত রেখা, আকৃতির সাথে সাথে ভাবের প্রাধান্য সমানভাবে রক্ষিত হয়।

অন্যান্য ছবিগুলিতে রেখা এবং আকৃতি অনবরত ভেঙে যায়। যুদ্ধের গতি এবং প্রকাণ্ডতা বোঝানোর সময় দীপ্তকীর্তি মানুষের চেহারার সরলীকৃত গতিময় রেখার ব্যবহার করেন। লক্ষ্যণীয় আকৃতি এবং রেখার ভাঙন দিয়েই তিনি তার বক্তব্য প্রকাশে কতটা সহজ বোধ করছেন। আমরা মনে করি এই সহজ অথচ দৃঢ় প্রকাশ প্রত্যেক পরিণত শিল্পীর আরাধ্য ধন। শিশুমন যা সহজাত সুরে করতে পারে আমরা আয়োজন করে তা পারি নে।

ফোটোগ্রাফি - সোহম চক্রবর্তী

সোহম গুপ্তিপাড়া রথসড়ক নারায়ণকলোনি নিবাসী এবং বর্তমানে কোলকাতায় উচ্চ-মাধ্যমিক পাঠরত। ফোটোগ্রাফি ও সিনেমা তার অন্যতম আগ্রহের বিষয়।

দীপ্তকীর্তির আঁকা দেওয়াল ছবি

এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন -

পাঠকের মন্তব্য

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    আরো প্রতিবেদন পড়ুন

    বাংলার প্রথম বারোয়ারি – গুপ্তিপাড়া শ্রী বিন্ধ্যবাসিনী পুজোর গল্প

    জনশ্রুতি অনুসারে, হুগলির গুপ্তিপাড়ায় স্থানীয় কিছু গ্রামবাসী এক জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু জমিদারবাড়ির লোকেরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং পুজোমণ্ডপে প্রবেশ করতে বাধা দেয় । এই ঘটনায় অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে, আর কখনও জমিদারবাড়ির পুজোয় যাবেন না, বরং নিজেরাই চাঁদা তুলে মায়ের আরাধনা করবেন। গ্রামের বারোজন যুবক এই উদ্যোগে […]

    কালীপুজো – বাংলার শক্তি উপাসনার সমন্বয়ধর্মী বিবর্তন

    আশ্বিনে দুর্গাপুজোর উৎসবের রেশ নিয়েই কার্তিকের অমাবস্যায় বাঙালী মেতে ওঠে শ্যামা মায়ের আরাধনায়। দুর্গাপুজোর মতই গৃহস্থ পরিবার থেকে শুরু করে মন্দির ও বারোয়ারি সর্বত্রই কালী পুজোর বিস্তার। দুর্গার মতোই কালীও বাংলার নিজের ঘরের মা হয়ে উঠেছেন আমাদের মানসপুজোয়। কালী প্রকৃতিগত ভাবে উগ্র, ভয়ঙ্করী এবং শ্মশানচারিণী। এই ভয়ানক রূপকল্পনা থেকে মমতাময়ী ঘরের মা কালী হয়ে ওঠার যাত্রা হিন্দুশাস্ত্র ও ইতিহাসের এক আকর্ষনীয় যাত্রা। শুধু ধর্মীয় পরিধি নয়, এই পরিবর্তনের পিছনে লুকিয়ে আছে বাংলার জীবনশৈলী, দর্শন ও সমাজের এক আশ্চর্য বিবর্তনের গল্প।

    দুর্গা পুজোর ইতিহাস ও বিবর্তন / পর্ব ২ / ধর্মীয় ও নৃতত্ববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন

    সম্পূর্ণ প্রতিবেদনের পাঠ শুনুন 00:00 1X Sorry, no results.Please try another keyword ৩/ ধর্মীয় শক্তিপুজোর দৃষ্টিকোন – বৈদিক ও পৌরাণিক মিশ্রন আমাদের জ্ঞানচর্চার একটা বড়ো মুশকিল হলো তথ্যের প্রাচুর্য কিন্তু বোধের অভাব। দুর্গা নিয়েও আমাদের ইতিহাস চর্চার মূল উদ্দেশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখি কোন পুরাণে কী গল্প লেখা আছে তাই আলোচনা। অবশ্য অন্যরকম হওয়ার কথাও নয়। […]