কালীপুজো – বাংলার শক্তি উপাসনার সমন্বয়ধর্মী বিবর্তন

এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন -

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনের পাঠ শুনুন

আশ্বিনে দুর্গাপুজোর উৎসবের রেশ নিয়েই কার্তিকের অমাবস্যায় বাঙালী মেতে ওঠে শ্যামা মায়ের আরাধনায়। দুর্গাপুজোর মতই গৃহস্থ পরিবার থেকে শুরু করে মন্দির ও বারোয়ারি সর্বত্রই কালী পুজোর বিস্তার। দুর্গার মতোই কালীও বাংলার নিজের ঘরের মা হয়ে উঠেছেন আমাদের মানসপুজোয়। কালী প্রকৃতিগত ভাবে উগ্র, ভয়ঙ্করী এবং শ্মশানচারিণী। এই ভয়ানক রূপকল্পনা থেকে মমতাময়ী ঘরের মা কালী হয়ে ওঠার যাত্রা হিন্দুশাস্ত্র ও ইতিহাসের এক আকর্ষনীয় যাত্রা। শুধু ধর্মীয় পরিধি নয়, এই পরিবর্তনের পিছনে লুকিয়ে আছে বাংলার জীবনশৈলী, দর্শন ও সমাজের এক আশ্চর্য বিবর্তনের গল্প।

এই প্রতিবেদনে আমরা দেখবো কীভাবে ভয়ঙ্করী শ্মশানকালী থেকে করুণাময়ী দক্ষিণাকালীর উদ্ভব হলো এবং তন্ত্রের গূহ্য পুজো বাঙালির ঘরে ঘরে ভক্তিরসে আদৃত হলো। এই যাত্রাপথ বাংলার শক্তিসাধনার এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। বাংলার উপাসনা পদ্ধতিতে শাক্ত ধারণার উদ্ভব ও বিকাশ পর্যালোচনা করলে বাংলার সংস্কৃতির মূল ধারাটির সম্পর্কে বিশদ অবহিত হওয়া যায়।

কালীর রূপকল্প - আর্য ও অনার্য ধারণার মিশ্রন

আজকের সময়ে শিব ও কালী সর্বসাধারণের দেবতা হয়ে বিরাজ করেন। কিন্তু ব্যাপারটা চিরকাল এমন ছিলো না। শিব ও কালী উভয়েই অপেক্ষাকৃত নবীন দেব দেবী। বৈদিক সময়ে (খ্রীষ্টপুর্ব ১৫০০-৫০০) দেব দেবীর বিশেষ প্রচলন ছিলো না। মূর্তিপুজো তো নয়ই। বৈদিক উপাসনা ছিলো মূলতঃ যজ্ঞভিত্তিক। বৈদিক সময়ের পরে পৌরাণিক কালে অসংখ্য দেবদেবীর উপাখ্যান পাওয়া যায় এবং ধীরে ধীরে তাদের পুজো জনপ্রিয়তা লাভ করে। অন্যদিকে অনার্য দ্রাবিড় গোষ্ঠীর মধ্যে শিব ও কালী সহ আরো অন্যান্য দেবদেবীর জনপ্রিয়তা ছিলো। অবশ্য মূর্তি তেমন অর্থে দ্রাবিড়দের মধ্যেও বিশেষ প্রচলিত ছিলো না। অনার্যরা মূলতঃ টোটেম বা প্রতীকি পুজোতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। তবে সাংখ্যদর্শনের ধারণায় যে পুরুষ ও প্রকৃতির ধারণা পাওয়া যায়, শিব ও কালীর ধারণা তার থেকে বিশেষ আলাদা কিছু নয়। কেবল পার্থক্য এই যে আর্যদের মধ্যে ব্রহ্ম বা সচ্চিদানন্দ পুরুষের প্রভাব এবং প্রতিপত্তি খানিক বেশি। অনার্যদের মধ্যে শক্তিপুজোর চল বেশি ছিলো। এর অন্যতম কারন আর্যদের পশুপালন ভিত্তিক জীবনে বীজপ্রাধান্যে সমাজ গঠিত। আর অনার্যরা চাষবাসে বেশি দক্ষ হওয়ার কারনে তাদের জীবনশৈলী ক্ষেত্রপ্রাধান্যে তৈরি। কালে এই দুই গতিধারা মিশেছে এবং এই অনিবর্চনীয় মিশ্রধারার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ পূর্বভারতীয় শক্তিসাধনার বিবর্তনেই সবচেয়ে ভালো প্রকাশ পায়।

বৈদিক ধারণায় শক্তির ভয়াল ভয়ঙ্কর রূপের চেয়ে শুণ্যকার পুরুষের আধার হিসেবেই শক্তিকে দেখা হয়েছে। যেমন শিবের ধারণা বৈদিক রুদ্রদেবের সঙ্গে মানানাসই, তেমনি শক্তি বৈদিক যুগে অদিতি, ঊষা, হৈমবতী বা সরস্বতী নামে পুজিত হয়েছেন। অন্যদিকে বাংলার বা পূর্বভারতের মূল শাক্তধারাটি পরিচালিত হয়েছে তন্ত্রের লৌকিক পথে। তন্ত্রের পথে শক্তি ভয়ঙ্করী এবং তার পুজো সামাজিক ভাবে সম্ভব নয়। মূলতঃ শ্মশানে বা লোকবর্জিত জায়গায় শক্তিপুজোর আচার পালিত হয়। মজা হলো বৈদিক আরাধনায় সবার অধিকার খুব একটা প্রচলিত নয়। কিন্তু তান্ত্রিক শক্তিপুজোয় সমাজের সব শ্রেনীর মানুষের সমান অধিকার। তবে সে পুজো সামাজিক নয়। এইখানে একটা শুণ্যতা তৈরি হয় বাংলার সামাজিক উপাসনা পদ্ধতিতে। তার প্রভাবেই অনার্য শক্তিপুজোর ধারা ধীরে সমাজের মুলস্রোতে ঢুকে পড়ে। কিন্তু কালীর ভয়ানক তান্ত্রিক রূপ বা অসামাজিক তান্ত্রিক পুজো পদ্ধতি সমাজের মূল স্রোতে সম্ভব নয়। ফলে কালীর রূপকল্পেও পরিবর্তন প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ভয়ঙ্কর কালীর বদলে দরকার পড়ে দয়াময়ী মাতৃমূর্তির। সপ্তদশ শতাব্দীতে শ্রী কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ দক্ষিণাকালীর বর্তমান মূর্তিটি প্রবর্তন করেন এবং ‘বৃহদতন্ত্রসার’ গ্রন্থটি রচনা করে দক্ষিণাকালীর পুজোপদ্ধতিরও বিশদ বর্ণনা করেন। শ্মশানে পুজিত বামাকালী সমাজের ঘরে ঘরে পুজিত হতে শুরু করেন দক্ষিণাকালী রূপে।

পৌরাণিক উপাখ্যান ও তন্ত্রশাস্ত্রে কালীর স্বরূপ

কালীর অসংখ্য রূপ বিভিন্ন পুরাণ এবং অন্যান্য শাস্ত্রে বর্ণিত। তার মধ্যে দশমহাবিদ্যার প্রধান দেবী হিসেবেই কালী বাংলায় পুজিতা। এই দশমহাবিদ্যা দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপ। মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে শুম্ভ নিশুম্ভ বধের আগে দেবী দুর্গার ক্রোধজনিত ভ্রুকুটি থেকে কালীর জন্ম। কালী উগ্রচণ্ডী, প্রলয়কারিনী ধ্বংসের দেবী।


"সৃষ্টি স্থিতি বিনাশানাং শক্তিভুতে সনাতনী
গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণী নমস্তুতে।"


চণ্ডীর এই শ্লোক থেকে বোঝা যায় কালী সৃষ্টি, স্থিতি এবং বিনাশকারীনি এবং সর্বভুতে শক্তি রূপে চিরকাল বর্তমান। পঞ্চভুতের যা গুণাবলী দিয়ে আমাদের এই বিশ্ব গঠিত তার আশ্রয় তিনি। আমরা সাধারণতঃ ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বরকেই সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রলয়ের দেবতা বলে জানি। চণ্ডীতে এসে শক্তিই প্রধান হয়ে উঠছেন এবং ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং মহেশ্বর তারই প্রকাশ বলে বিবেচিত হচ্ছেন।

আবার ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ এবং মহাভাগবত পুরাণে দেখতে পাই দশমহাবিদ্যার আরেক উদ্ভবকাহিনী। দক্ষযজ্ঞে শিবকে নিমন্ত্রন করা হয় নি। পার্বতী সেই যজ্ঞে গিয়েছিলেন এবং শিবনিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন। পার্বতীর দেহ নিয়ে শিবের তাণ্ডব এবং সতীর একান্ন দেহখণ্ড নিয়ে একান্নপীঠের কথা সবাই জানেন। এই দক্ষযজ্ঞে পার্বতী যাওয়ার আগে শিবের কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় শিব পার্বতীকে যাওয়ার অনুমতি দিলেন না। পার্বতীর বারংবার বলা সত্বেও শিব যখন অনুমতি দিচ্ছেন না তখন পার্বতী নিজের স্বরূপ প্রকাশ করলেন। অনেকটা গীতার কৃষ্ণের অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখানোর মতই। পার্বতী নিজেকে শিবের সামনে দশমহাবিদ্যারূপে প্রকট করেন এবং দশদিকে অবস্থান করেন। শিব সেই দশরূপ দেখে বিহ্বল হয়ে পড়েন।

একটু খেয়াল করে দেখলেই বুঝবেন বৈদিক ব্রহ্ম এখানে প্রকৃতির রূপ দেখে বিহ্বল। বৈদিক অদ্বৈতবাদের ধারণাটিকে পাশাপাশি রাখলে দেখা যায় ‘ব্রহ্ম সত্য জগত মিথ্যা’ ব্যাপারটি প্রায় উলটে যাচ্ছে এখানে। লৌকিক ছড়ায় যেমন বলা হয় - পঞ্চভুতের ফাঁদে ব্রহ্ম পড়ে কাঁদে। এখানে শক্তি হয়ে উঠছেন প্রধান। এই বিষয়টিই প্রধাণতঃ শিবের ওপরে কালীর মূর্তির প্রধান তত্বদর্শন। হিন্দুধর্মে তথা দর্শনের যে প্রধান গুণটি আমরা প্রায়শঃই খেয়াল করি নে বা বুঝতে পারলেও মৌলবাদী চিন্তায় অস্বীকার করি তা হলো - এই দর্শন প্রায় সবজায়গাতেই কোন আলোচ্য বিষয়কে একাধিক প্রেক্ষিত থেকে বিচার করে। এবং তার মধ্যে অনেক জায়গাতেই এক্কেবারে বিপরীত পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তাও সাদরে গৃহীত হয়। হিন্দু দর্শনেরই কয়েকটি দর্শন যে ইশ্বরের অস্তিত্বও স্বীকার করে না তাও আমরা বিশেষ মনে রাখি বলে মনে হয় না। বহু সমালোচিত চার্বাক দর্শনের কথা তো বাদই দিলাম।

পৌরাণিক আখ্যানে সাংখ্যের পুরুষের শ্রেষ্ঠতা শক্তির শ্রেষ্ঠতায় পরিবর্তিত হয়েছে। হিন্দু উপাসনা পদ্ধতিতে শক্তির শ্রেষ্ঠতার প্রাধান্যে গঠিত মূল পথটি হল তন্ত্র। পূর্বভারত বিশেষ করে বাংলা চিরকালই তন্ত্রচর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিলো। পৌরাণিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব উপাসনার ধারণাটি তন্ত্রের সঙ্গে মিললেও এই দুই পথের পদ্ধতিগত পার্থক্য প্রচুর। তন্ত্র হলো মূলতঃ প্রক্রিয়াগত শাস্ত্র। ফলে মূর্তিকল্পনা সেখানে প্রায়শঃই বর্জিত হয়। তন্ত্রে শক্তিপুজো হয় যন্ত্রে। একটি ধাতব চতুষ্কোন পাতের ওপর কিছু জ্যামিতিক আকার আঁকা হয়। এবং এইটিই যন্ত্রটিই আরাধ্য হয়। পদ্ধতিগত পার্থক্য থাকলেও তান্ত্রিক যন্ত্রও বৈদিক পঞ্চভুতের ধারণার ভিত্তিতেই তৈরি। পুরাণও বৈদিক ধারণাকেই কাহিনীর আকারে বিবৃত করে। ফলে পৌরাণিক শক্তির ধারণা এবং তান্ত্রিক শক্তির উপাসনা পদ্ধতি পরস্পর মিলেমিশে চলতে তেমন কোন অসুবিধে নেই। কিন্তু মুশকিল হল তান্ত্রিক শক্তি উপাসনা পদ্ধতি সামাজিক নয়। তান্ত্রিক উপাসনা শ্মশান বা লোকালয় বর্জিত জায়গাতেই করার নিয়ম। সামাজিক পরিমণ্ডলে এ ধরণের উপাসনা সম্ভব নয়। এই সমস্যা থেকেই শক্তির এক সমাজগ্রাহ্য উপাসনা পদ্ধতির প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

বাংলায় ভক্তি আন্দোলন ও সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বাংলায় ভক্তি আন্দোলনের প্রধান পথিক শ্রীচৈতন্য। বৈদিক ধারণা যখন আচারসর্বস্বতা এবং পরিণামহীন তত্বচর্চায় পর্যবসিত ঠিক সেই সময়েই শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব। বৈদিক তত্বের বেড়াজাল থেকে বাংলাকে বের করে এনে তিনি সহজ ভক্তির পথ দেখালেন। সে ষোড়শ শতাব্দীর কথা। শ্রীচৈতন্যের তিরোধান ১৫৩৪ সালে। শতাব্দী পেরিয়ে সপ্তদশ শতকে এসে দেখি বৈষ্ণব ভক্তি উপাসনাও আচারসর্বস্বতায় পর্যবসিত। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা সমাজবর্জিত হওয়ার জায়গায় দাঁড়িয়ে। সপ্তদশ শতকে এসে বৈষ্ণব সম্প্রদায় অসংখ্য ভাগে বিভক্ত এবং তার কয়েকটি সম্প্রদায়ের আচার আচরন সমাজের কাছে বিসদৃশ হয়ে ওঠে।

সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অত্যন্ত অস্থির। মুঘল শাসন শেষের দিকে। আকবরের মৃত্যু হয়েছে। মুঘল শাসনের দুর্বলতার সুযোগে স্থানীয় অনেক শাসক তৈরি হয়েছে এদিক ওদিকে। স্বাধীন নবাবী শাসনের ভিত তৈরি হচ্ছে।

এই সময়ে বাংলার উপাসনা পদ্ধতিতে শক্তির বিশেষ প্রভাব বেড়ে ওঠে। এবং তা স্বাভাবিকভাবেই তন্ত্রের দিকে ঝোঁকে। তান্ত্রিক শক্তি উপাসনার মূল দেবী কালী প্রবলভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বাংলার দুর্বল সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কালীর ভয়ঙ্করী সংহারকারীনি রূপ বাংলার মানসিক আশ্রয় হয়ে ওঠে। কিন্তু তন্ত্রের সমাজবহির্ভূত আচার থেকে বেরিয়ে না এলে কালী ঘরে ঘরে পুজিতা হতে পারেন না। এইখানে এসে কালীর দর্শন ও রূপকল্পনায় এক অসামান্য রূপান্তর ঘটে যা বাংলার শক্তি উপাসনা পদ্ধতিতে এক সমন্বয়কারী যুগপরিবর্তন বলে গণ্য হতে পারে।

কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ এবং দক্ষিণাকালীর উদ্ভব

নবদ্বীপের অসংখ্য কৃতি সন্তানের অন্যতম শ্রী কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ আনুমানিক ১৬০০ সাল নাগাদ জন্মগ্রহণ করেন। এ সময়েও কালীর কোন সর্বজনীন মূর্তি ছিলো না। তান্ত্রিক শক্তি পুজো যন্ত্রে অনুষ্ঠিত হতো। প্রচলিত কাহিনী অনুসারে শ্রী কৃষ্ণানন্দ স্বপ্নাদেশ পান পরদিন ভোরবেলা তিনি যে নারীকে দেখবেন তার রূপই হবে কালীর প্রতিমার রূপ। পরদিন ভোরে কৃষ্ণানন্দ যাকে দেখতে পেলেন তিনি একজন গ্রাম্য নারী। অত্যন্ত পরিচিত ভঙ্গীতে ডান পা খানিক ওপরে রেখে তিনি দেওয়ালে ঘুঁটে দিচ্ছিলেন। খোলা চুল হাঁটু ছাড়িয়েছে। কাজের ভাবে বেশবাস খানিক অবিন্যস্ত। হঠাৎ কৃষ্ণানন্দকে দেখে সেই গ্রাম্য রমনী লজ্জায় জিভ কাটলেন। কৃষ্ণানন্দ দেখলেন মায়ের রূপ। যে লোলজিহ্বা ছিলো রক্তপিপাসু সে জিভ হয়ে উঠলো লজ্জার প্রতীক। সৃষ্টি হলো দক্ষিণাকালীর প্রতিমাকল্পনা।

কেবল প্রতিমাকল্পনাই নয়, কৃষ্ণানন্দ অসংখ্য তন্ত্রগ্রন্থ পড়ে তাদের সার নিয়ে লিখলেন ‘বৃহৎ তন্ত্রসার’। তান্ত্রিক পদ্ধতিতেই শুদ্ধাচারে সামাজিকভাবে কীভাবে কালীপুজো করা যায় সে বিষয়ে এই গ্রন্থটি পথপ্রদর্শক হয়ে উঠলো।

দুই ভিন্ন রূপ, দুই ভিন্ন পথ – বামা কালী ও দক্ষিণা কালী

সাংখ্য, যোগ বা বৈদিক সাধনাকে নিবৃত্তির সাধনা হিসেবে দেখলে তন্ত্র অবশ্যই প্রবৃত্তিমার্গের সাধন। তন্ত্রে সাতটি প্রধান আচার রয়েছে - বেদ, বৈষ্ণব, শৈব, দক্ষিণ, বাম, সিদ্ধান্ত ও কৌল। এদের মধ্যে প্রথম তিনটি পশুভাবের সাধন। চতুর্থ এবং পঞ্চম বীরভাব এবং শেষ দুটি দিব্যভাবের সাধনা। পশুআচার তামসিক, বীরাচার রাজসিক এবং দিব্যাচার সাত্বিক ভাবের সাধনা। আবার সাধারণভাবে প্রথম চারটি পথকে দক্ষিণাচারধর্মী এবং শেষ তিনটিকে বামাচারধর্মী বলা হয়। তান্ত্রিক মহাগ্রন্থ কুলার্ণবতন্ত্রে দেখতে পাই -


“সর্বেভ্যশ্চোত্তমা বেদা বেদেভ্যো বৈষ্ণবং পরম্‌।
বৈষ্ণবাদুত্তমং শৈবং শৈবাদ্দক্ষিণমুত্তমম্ ।। ৭ ।।
দক্ষিণাদুত্তমং বামং বামাৎ সিদ্ধান্তমুত্তমম্ ।
সিদ্ধান্তাদুত্তমং কৌলং কৌলাৎ পরতরং ন হি।। ৮ ।।”


বেদাচার সব চেয়ে উত্তম । তা থেকে উত্তম বৈষ্ণবাচার। বৈষ্ণবাচার থেকে উত্তম শৈবাচার। তা থেকে উত্তম দক্ষিণাচার। ৭
দক্ষিণাচার থেকে উত্তম বামাচার। তা থেকে উত্তম সিদ্ধান্তাচার। সিদ্ধান্তাচার থেকে উত্তম কৌলাচার। কৌলাচার থেকে শ্রেষ্ঠতর আর কিছু নেই। ৮

~ কুলার্ণবতন্ত্রম্‌ (দ্বিতীয় উল্লাস) / উপেন্দ্রকুমার দাস সম্পাদিত / পৃষ্ঠা - ৩৩


বামাচার মানে বাঁ হাতের পথ। সোজা কথায় যা সামাজিক গ্রাহ্য পথ নয়, বিপরীত পথ। আমরা যেমন চলতি কথায় বলি বিধি বাম। তন্ত্র বলতে যার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত তা হল পঞ্চম’কার সাধনা। মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা এবং মৈথুন এই পাঁচটি হল পঞ্চম’কার। আমরা সাধারণতঃ এগুলি বাহ্যিক অর্থে বুঝি। তন্ত্রশাস্ত্র আরো গভীর কিছু প্রতীকি অর্থে এগুলি ব্যবহার করে। সমস্ত রকম তন্ত্রপথে পঞ্চম’কার সাধনার বিধান নেই। তন্ত্রে একথা খুবই পরিস্কার যে জিতেন্দ্রিয় ছাড়া এ সাধনা সম্ভব নয়। অজিতেন্দ্রিয়ের পঞ্চম’কার সাধনে অধিকার নেই। খুব সহজে দেখে নেওয়া যাক পঞ্চম’কার বা তান্ত্রিক পঞ্চতত্ত্বের প্রতীকি অর্থগুলি -

মদ্য = কুলদ্রব্য কে তন্ত্রে মদ বলে উল্লেখ করা হয়। বাহ্যমদকে শোধন করে সোমরস জ্ঞানে গ্রহন করার কথা মদ্য হিসেবে মনে করা হয়। আবার যজ্ঞে আহুতি দেওয়া হয় এমন তরলকেও মদ্য বলে ধরা হয়। দার্শনিক অর্থে বুদ্ধির যজ্ঞে ‘মন’ হলো আসল মদ। যেমন আমরা সহজেই বুঝি - কামনা বাসনা ইত্যাদি নেশার মত আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে।

মাংস = যজ্ঞতে আহুতি দেওয়া পশুর মাংসই তন্ত্রের দ্বিতীয় ম’কার। প্রতীকি অর্থে জ্ঞানের খড়্গে পশুত্বভাব কে আহুতি দেওয়া হয়। এই পশুত্বভাবই আসলে মাংস। সাধক নিজের পশুত্বকে আহুতি দেবেন এবং ভক্ষণ করবেন।

মৎস্য = বাঙালির প্রধান আমিষ হলো মাছ। আবার মাছ পুজোতেও লাগে। মাছ হলো ইন্দ্রিয়ের প্রতীক। আবার তন্ত্রের গূঢ় তত্বে কুলকুণ্ডলীনির উত্তরণের পথকেও মাছের আকার ভাবা হয়। আধুনিক বিজ্ঞানের DNA-এর এক একটা প্যাঁচের আকৃতি যেমন অনেকটা মাছের মত অনেকটা সেইরকম।

মুদ্রা = তন্ত্রশাস্ত্রে মুদ্রা দুই অর্থে ব্যবহৃত। একটি যোগমুদ্রা। অবশ্য যোগমুদ্রা বলতে সবসময় উৎকট আসন নয়। এই যে আমরা হাত জোড় করে প্রনাম করি এও এক মুদ্রা। আবার অন্যজায়গায় মুদ্রা বলতে শস্য অর্থাৎ চাল, ছোলা ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে। যা মদের সঙ্গে খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

মৈথুন = মৈথুন অর্থে যৌনমিলনই বটে। তবে ওই জিতেন্দ্রিয়ের যৌনতা কথাটাও সোনার পাথরবাটির মতই হয়। মৈথুন গভীর অর্থে সাংখ্য দর্শনের পুরষ ও প্রকৃতির মিলনের কথা। তন্ত্রশাস্ত্রে সৃষ্টিতত্ব প্রকাশ ও বিমর্শ এই দুই ধারণার কথা বলে। এই বিমর্শ শব্দটির অর্থ বিশেষভাবে আলোচনা বা বিচার করা। শিবের জ্যোতির্ময় প্রকাশ প্রকৃতির বিমর্শস্বরূপে মিলিত হয়। একেই তান্ত্রিক মিলন বলে। একটু বিচার করলে দেখা যাবে ধারণাটি বিজ্ঞানের পদার্থ ও শক্তির মত। বা আলোর কণাধর্ম এবং তরঙ্গধর্মের মতো। পদার্থ ও শক্তির মিলনেই বিশ্বসৃষ্টি। এই শিব ও শক্তির মিলন পঞ্চম’কারের মৈথুন।

মনে রাখা দরকার পঞ্চমকার বামাচার হলেও সমস্ত তান্ত্রিকের এতে অধিকার নেই। কেবলমাত্র কুলাচার সিদ্ধ জিতেন্দ্রিয় কৌলিক তান্ত্রিকেরই পঞ্চমকার সাধনায় অধিকার রয়েছে।

দক্ষিণাচার তন্ত্র থেকে আলাদা নতুন আচার নয়। যদিও তন্ত্রে দক্ষিণাচার যে বামাচারের নিচে অবস্থান করে তা শ্লোকেই দেখা যায়। আবার সিদ্ধান্তাচার এবং কৌলাচার বামাচারের চেয়ে উন্নত। দক্ষিণাচার সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কথা বলে এবং এই পথে প্রকাশ্য বেদাচার চর্চা হয়। এই পথে বামাচারী পঞ্চম’কার সাধনা নিষিদ্ধ। কৃষ্ণানন্দ যখন দক্ষিণাকালীর কল্পনা করেন তখন এই মূলতঃ তন্ত্রের দক্ষিণাচারকেই সামাজিকভাবে আরো গ্রহণযোগ্য করে তোলেন। কৃষ্ণানন্দের অবদান তাই কেবল দক্ষিণাকালী মূর্তিকল্পনাই নয়, বাংলার সমগ্র শক্তি উপাসনা পদ্ধতিতে একটি যুগসন্ধিক্ষণের প্রবর্তন তাঁর প্রধান কৃতিত্ব।

বামা ও দক্ষিণা কালীর এই বিভাজন কেবল মূর্তিতত্ত্ব বা উপাসনা পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আসলে হিন্দুধর্মের দুটি ভিন্ন স্রোতের প্রতীক—একটি গুহ্য, রহস্যময় এবং সামাজিক প্রথার ঊর্ধ্বে (বামা কালী)। অন্যটি প্রকাশ্য, কল্যাণময় এবং সামাজিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত (দক্ষিণা কালী)। বামা কালী সেই আদিম, অপ্রতিরোধ্য মহাজাগতিক শক্তিকে প্রকাশ করেন, যাকে সমাজ ভয় পায়। অন্যদিকে, দক্ষিণা কালী হলেন সেই শক্তিরই সফল সামাজিকীকরণ, যা তাঁকে ভয়ঙ্করী দেবী থেকে করুণাময়ী মা-তে রূপান্তরিত করেছে।

বৈশিষ্ট্যবামা কালীদক্ষিণা কালী
মূর্তিতত্ত্ববাম পা সামনেডান পা সামনে
স্বরূপউগ্র, ভয়ঙ্করী, শ্মশানচারীশান্ত, কল্যাণময়ী, মাতৃরূপা
উপাসনা স্থলশ্মশান, গুপ্ত স্থানগৃহ, মন্দির, বারোয়ারি মণ্ডপ
উপাসনা পদ্ধতিবামাচারী তন্ত্রদক্ষিণাচারী, বৈদিক ও ভক্তিমার্গের সমন্বয়
দার্শনিক ভিত্তিআগমআগম ও নিগমের সমন্বয়

তন্ত্র ও ভক্তির সমন্বয় - শ্যামাসঙ্গীতের উদ্ভব

শ্রীচৈতন্যের ভক্তিবাদের প্রভাবে বাংলা বৈষ্ণব ভক্তির স্রোতে ভেসেছিলো। কালীর ক্ষেত্রে এই কাজটি করেছে শ্যামাসঙ্গীত। ভয়ঙ্করী কালী থেকে ঘরের স্নেহময়ী শ্যামা মা হয়ে ওঠার পেছনে শ্যামাসঙ্গীতের অবদান অনস্বীকার্য। তন্ত্র সাধনার মূল লক্ষ্য ছিলো শক্তি, সিদ্ধি এবং মোক্ষলাভ। শ্যামাসঙ্গীতের হাত ধরে বাংলার শক্তির স্বরূপ হয়ে উঠলো মমতাময়ী মায়ের সাথে ছেলের আবেগঘন সম্পর্ক। সেখানে বাহ্যিক জীবনের ব্যাথা, যন্ত্রণা দৈনন্দিন সহজ ভাষায় ফুটে উঠতে লাগলো। সঙ্গীতের ভাষা ভক্তির ভাষা, ভালোবাসার ভাষা। সঙ্গীতের সাহচর্যে বাংলায় শক্তির ভয়াল রূপের বদলে আশ্রয়দাত্রী বরাভয় রূপ ফুটে উঠলো প্রধান হয়ে।

শ্যামাসঙ্গীতের প্রধান রূপকার সাধক রামপ্রসাদ সেন (১৭২৩-১৭৭৫)। তিনি শ্রী কৃষ্ণানন্দেরই শিষ্য। একদিকে তিনি গুরু কৃষ্ণানন্দের কাছে শিখেছেন তন্ত্রের গূঢ় তত্ব ও সাধন, অন্যদিকে তিনি সহজ বালকের মতো গান লিখছেন তার আদরের মা কে নিয়ে। তিনি মায়ের কাছে অভিমান করছেন, নালিশ করছেন, আবদার করছেন। তিনি আর তখন শক্তি উপাসক নন। তিনি মায়ের অবোধ ছেলে। নেহাতই গ্রাম্য উপমায় বলছেন -

"মা আমায় ঘুরাবি কতো? কলুর চোখ বাঁধা বলদের মত…"

রামপ্রসাদের শিষ্য কমলাকান্ত ভট্টাচার্য (১৭৭০-১৮১৮) তার গানে সেই ধারা বজায় রেখেছেন। অনেকেই হয়তো মনে রাখেন না, কমলাকান্তের জন্ম গুপ্তিপাড়ার পাশের অম্বিকা কালনায়। কালনার রাজবাড়িতেই প্রথম তার সঙ্গীতপ্রতিভা বিকশিত হয়। পরে বর্ধমানের রাজা তেজচাঁদ মহতাবের আমন্ত্রণে তিনি বর্ধমানের বাসিন্দা হন। কমলাকান্তের গানে মাঝে মাঝেই বিশেষভাবে ফুটে ওঠে সৃষ্টির গূঢ় তত্ব -

“শ্যামা কখনো পুরুষ, কখনো প্রকৃতি

কখনো শুণ্যকার হে

মায়ের সে ভাব দেখিয়া কমলাকান্ত

সহজে পাগল হলো রে”

 

“সদানন্দময়ী কালী, মহাকালের মনমোহিনী।

তুমি আপনি নাচো আপনি গাও মা, আপনি দাও মা করতালি।।

আদিভূতা সনাতনী, শূন্যরূপা শশি-ভালী।

ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন, মুণ্ডমালা কোথায় পেলি।।”

পরবর্তী যুগে কাজী নজরুল ইসলাম রচনা করেছেন কালজয়ী শ্যামাসঙ্গীত। আরো পরে অম্বিকা কালনার সাধক ভবা পাগলা রামপ্রসাদ এবং কমলাকান্তের উত্তরসূরী হিসেবে সারাজীবন রচনা করে গেছেন মা কালীর গান। ভবা পাগলার গান প্রকৃতই জ্ঞান ও ভক্তির অপূর্ব মিলন। অনবদ্য কাব্যিক অলঙ্কারে তিনি বলেন সৃষ্টির কথা -

“সাগরের জল নীল বরন

তাইতে প্রাণ দে বিসর্জন

পাবি রতন অমূল্য ধন

ফুটবে কমল সহস্রারে

মন হংস তুই সাঁতার দে রে কালী সাগরে”

বর্তমানের কালীপুজো - ব্যক্তিগত সাধনা থেকে সার্বজনীন উৎসব

শক্তিউপাসনা অতীতে ব্যক্তিগত বা ছোট গোষ্ঠীর গোপন পুজো ছিলো। সাধকরা নির্জনে এই সাধনা করতেন। বাংলার ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে কালীপুজো করতো। কৃষ্ণানন্দের দক্ষিণাকালী পুজো প্রচলনের পরে অষ্টাদশ শতকে কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জগদ্ধাত্রী পুজোর মত কালীপুজোও প্রচার ও প্রসার লাভ করে। দুর্গাপুজোর মত কালীপুজোও ধীরে ধীরে সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠে। সময়ের সাথে সাথে গুপ্তিপাড়ার নিদর্শন সামনে রেখে কালীপুজোও দুর্গাপুজোর মত বারোয়ারি আকার ধারন করে।

আজকের শ্যামা পূজা কোনো একক ঐতিহ্য নয়। শ্মশানচারিণী ভয়ঙ্করী বামা কালী থেকে বাঙালির ঘরের স্নেহময়ী শ্যামা মা - এই দীর্ঘ যাত্রা আসলে বাংলার আধ্যাত্মিক ও সামাজিক বিবর্তনের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এই রূপান্তর কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং বহু শতাব্দীর দার্শনিক সংঘাত, সামাজিক প্রয়োজন এবং ভক্তের আকুতির এক সম্মিলিত ফসল।

ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের মতো এক শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত আগমিক শক্তিকে বৈদিক ‘নিগম’ কাঠামোর মধ্যে স্থাপন করে জন্ম দিয়েছিলেন দক্ষিণা কালীর—এক সৌম্য, কল্যাণময়ী মাতৃমূর্তির। তিনি তন্ত্রের ভয়ঙ্কর প্রতীকগুলিকে এক গার্হস্থ্য প্রেক্ষাপটে পুনঃস্থাপন করে দেবীকে সাধারণ মানুষের কাছে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন। এরপর রামপ্রসাদ সেনের মতো সাধক কবিদের হাত ধরে তন্ত্রের সাধনা পরিণত হলো ভক্তের সংলাপে। বাৎসল্য রসের স্পর্শে দেবী কালী হয়ে উঠলেন ‘মা’, যাঁর সঙ্গে অভিমান করা যায়, ঝগড়া করা যায়, আবার যাঁর চরণে নিঃশর্তে আত্মসমর্পণও করা যায়।

তন্ত্রের জ্ঞানমার্গ ও ভক্তির প্রেমমার্গ অনির্বচনীয়ভাবে মিশে গেছে কালী পুজোয়। শ্যামা মা তাই কেবল এক দেবীমূর্তি নন, তিনি বাংলার সমন্বয়বাদী সংস্কৃতির প্রতীক। বাংলার শক্তিউপাসনার বিবর্তন প্রমাণ করে একটি সমাজ তার গভীরতম সামাজিক ও আবেগঘন চাহিদা পূরণের জন্য তার আধ্যাত্মিক প্রতীককে কীভাবে বিবর্তিত করে তৈরি করে এমন এক দেবীকে, যিনি একাধারে পরম ব্রহ্মাণ্ডের মহাজাগতিক প্রলয়ঙ্কারীনি শক্তি আবার অন্যদিকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের একান্ত আপন, স্নেহময়ী মা।

এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন -

পাঠকের মন্তব্য

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    আরো প্রতিবেদন পড়ুন

    বাংলার প্রথম বারোয়ারি – গুপ্তিপাড়া শ্রী বিন্ধ্যবাসিনী পুজোর গল্প

    জনশ্রুতি অনুসারে, হুগলির গুপ্তিপাড়ায় স্থানীয় কিছু গ্রামবাসী এক জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু জমিদারবাড়ির লোকেরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং পুজোমণ্ডপে প্রবেশ করতে বাধা দেয় । এই ঘটনায় অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে, আর কখনও জমিদারবাড়ির পুজোয় যাবেন না, বরং নিজেরাই চাঁদা তুলে মায়ের আরাধনা করবেন। গ্রামের বারোজন যুবক এই উদ্যোগে […]

    দুর্গা পুজোর ইতিহাস ও বিবর্তন / পর্ব ২ / ধর্মীয় ও নৃতত্ববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন

    সম্পূর্ণ প্রতিবেদনের পাঠ শুনুন 00:00 1X Sorry, no results.Please try another keyword ৩/ ধর্মীয় শক্তিপুজোর দৃষ্টিকোন – বৈদিক ও পৌরাণিক মিশ্রন আমাদের জ্ঞানচর্চার একটা বড়ো মুশকিল হলো তথ্যের প্রাচুর্য কিন্তু বোধের অভাব। দুর্গা নিয়েও আমাদের ইতিহাস চর্চার মূল উদ্দেশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখি কোন পুরাণে কী গল্প লেখা আছে তাই আলোচনা। অবশ্য অন্যরকম হওয়ার কথাও নয়। […]

    দুর্গা পুজোর ইতিহাস ও বিবর্তন / পর্ব ১ / সামাজিক ও শৈল্পিক দৃষ্টিকোন

    সম্পূর্ণ প্রতিবেদনের পাঠ শুনুন 00:00 1X Sorry, no results.Please try another keyword দুর্গা পুজো বাঙালির বচ্ছরকার উৎসব। সারা বছর ধরে বাংলার গ্রাম শহর প্রতীক্ষা করে থাকে উমা বাপের বাড়ি আসবে বলে। আশ্বিনের প্রকৃতির সঙ্গে দুর্গাপুজোর আমেজ যেন এক হয়ে যায়। আশ্বিনের অমাবস্যায় মহালয়া। পিতৃতর্পণের মধ্যে দিয়ে পিতৃপক্ষের শেষ এবং পরবর্তী পনেরো দিন দেবীপক্ষ – লক্ষীপুজোয় […]